বাংলাদেশে এসে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বোলিং কোচ ল্যাঙ্গাভেল্ট

বাংলাদেশে এসে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বোলিং কোচ ল্যাঙ্গাভেল্ট

ক্রীড়া ডেক্স: কোর্টনি ওয়ালশের যুগ শেষ। হিথ স্ট্রিকের পর একজন ভালোমানের পেস বোলিং কোচ খুঁজছিল বাংলাদেশ। পেয়েও গিয়েছিল। এক সময়ে দুনিয়া কাঁপানো ক্যারিবীয় কিংবদন্তী কোর্টনি ওয়ালশকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই কিংবদন্তীকে পেয়ে তো সবাই ভেবেছিল, এবার বুঝি বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্ট হয়ে যাবে দুনিয়ার সেরা বোলিং ডিপার্টমেন্ট।

কিন্তু সব আশার গুড়ে বালি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর চুক্তি শেষ, ওয়ালশের সঙ্গে আর সেই চুক্তি নবায়ন করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ক্যারিবীয় কিংবদন্তি যে জায়গায় বাংলাদেশের বোলিংকে রেখে গেলেন, সে জায়গায় অনাকাংখিতভাবে হলেও কেউ দেখতে চায়নি।

বাংলাদেশের পেস বোলিং এখন পুরোপুরি ভোঁতা। নখ-দন্তহীন। কোনো ধার নেই, কোনো বিষ নেই। নির্বিষ পেস বোলিং। যে বোলিংয়ের বিপক্ষে অনায়াসেই ৩০০ কিংবা ৩০০ প্লাস রান তুলে ফেলতে পারছে যে কেউ। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে কোনো লক্ষ্য ছুঁড়ে দিলে, সেটাকে অনায়াসেই পাড়ি দিচ্ছে প্রতিপক্ষ দলগুলো।

২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছিল, তার মূলে ছিল কিন্তু নতুন বলে উইকেট নেয়ার দারুণ ক্ষমতা। বাংলাদেশের বোলারর ইনিংসের শুরুতেই নতুন বলে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের কোমর ভেঙে দিতেন।

কিন্তু ২০১৯ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশের পেসাররা এখনও পর্যন্ত নতুন বলে প্রথম পাওয়ার প্লেতে নিতে পেরেছেন কেবল ৭ উইকেট। যার স্ট্রাইক রেট ১১৩.১৪ এবং বোলিং গড় হচ্ছে ১০৩।

কোর্টনি ওয়ালশের উত্তরসূরি হিসেবে বাংলাদশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্টের সামনে এখন এটাই মূল সমস্যা।

ঘরের মাঠে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ বোলারই জানেন কিভাবে উইকেট থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে হয়। যদিও ঘরের মাঠের উইকেট অধিকাংশ সময়ই থাকে স্পিন বান্ধব। তবুও বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমান কাটার ধরাতে পারেন এই উইকেটে। এমনকি ইংল্যান্ডের উইকেটেরও দারুণ ব্যবহার করতে জানেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে নেয়া ২০ উইকেটের প্রায় সবগুলোই তিনি নিয়েছেন ৩০ ওভারের পর।

তারপরও প্রায় প্রতিটি কন্ডিশনেই বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট দারুণ সফল। ইতিপূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফগানিস্তানের কোচিং স্টাফের অংশ থাকা ল্যাঙ্গাভেল্ট জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তিনি টাইগারদের বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং ফিটনেস নিয়েই বেশি কাজ করবেন।

ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘প্রতিটি ফরম্যাটেই নতুন বলে আপনাকে ধারাবাহিক হওয়া প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে লাইন-লেন্থ ঠিক রাখাও প্রয়োজন এবং প্রতি ওভারে অন্তত ৪ থেকে ৫টি বল রাখতে হবে সঠিক জায়গায় (রাই এরিয়া)। এই জায়গা নিয়েই আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারবেন।’

হোম কন্ডিশন কিংবা বাইরের- সব জায়গাতেই যেন পেসাররা সমানভাবে দক্ষ থাকে, সে দিকেই নজর রাখবেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশ নিজেদের হোম কন্ডিশনে দু’জন পেসার খেলিয়ে থাকে। দেশের বাইরে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামে। আমার কাজ হবে সব সময়ই অন্তত তিনজন পেসারকে প্রস্তুত রাখা, যারা যে কোনো সময় দলের প্রয়োজনে কাজে লাগবে এবং ধারাবাহিকভাবে সঠিক জায়গায় লাইন-লেন্থ বরাবর বল করে যেতে পারবে।’

সেরা হতে চাইলে নতুন বলেই ভালো করতে হবে এবং ধারাবাহিক হতে হবে। এ বিষয়টাই জোর দিয়ে বললেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি সেরা হতে চান, তাহলে আপনাকে নতুন বলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জানতে হবে। একই সঙ্গে লাইন-লেন্থেও ধারাবিহক হতে হবে।’

মোস্তাফিজের প্রসঙ্গ টেনে এনে ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘(মোস্তাফিজুর রহমান) পেস পরিবর্তনে খুব ভালো। কিন্তু নতুন বলে তার জন্য এটা খুবই কঠিন। ওই সময় (নতুন বলে প্রথম পাওয়ার প্লেতে) উইকেট গ্রিপ করা কঠিন। আমি যখন বোলিং করতাম, তখন সিম পজিশনটা সুন্দরভাবে, সোজা রাখতাম। সে (মোস্তাফিজ) প্রচুর অফ-কাটার ব্যবহার করে। তবে আমার কাছে যেটা মনে হয়, কাটারের সঙ্গে সুইং মেশাতে পারলে দারুণ হতো।’

২০১৭ সালে ল্যাঙ্গাভেল্ট ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং কোচ। ওই সময় প্রোটিয়ারা বাংলাদেশকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল। ওই সিরিজে বাংলাদেশের পেসাররা কেবল ৯ উইকেট নিতে পেরেছিল। সেই সিরিজের কথা মনে করে ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘এটা আমার জন্য দারুণ একটি চ্যালেঞ্জ। আমি কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং কোচ ছিলাম। ওই সময় বাংলাদেশকে দেখেছি, বিদেশের মাটিতে তাদের কতটা সংগ্রাম করতে হয়। লাইন-লেন্থের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই গলদগর্ম হতে দেখেছি তাদের। এই বিষয়টাই এখন আমাকে ফিক্স করতে হবে। আমি আগে দেখবো এটা টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা কি না। আমার জন্য এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

মতিহার বার্তা ডট কম  ২৯ জুলাই ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply